সোমবার, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১২:১১ পূর্বাহ্ন
সংবাদ নারায়ণগঞ্জ:- অ্যালকোহল বা মদ উৎপাদন, কেনাবেচা, পান করা, পরিবহন, আমদানি-রফতানির ক্ষেত্রে নিয়মনীতি স্পষ্ট করে প্রথমবারের মতো বিধিমালা করেছে সরকার।
সম্প্রতি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষাসেবা বিভাগ থেকে ‘মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন, ২০১৮’ এর আওতায় ‘অ্যালকোহল নিয়ন্ত্রণ বিধিমালা, ২০২২’ জারি করা হয়েছে।
এর আগে, ‘মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন, ২০১৮’, ‘অ্যালকোহল নিয়ন্ত্রণ (লাইসেন্স ও পারমিট ফিস) বিধিমালা ২০১৪’, ‘মুসলিম প্রহিবিশন রুল ১৯৫০’ ও ‘এক্সাইজ ম্যানুয়াল (ভল্যুম-২)’ ও বিভিন্ন নির্বাহী আদেশ দিয়ে অ্যালকোহল সংক্রান্ত বিষয়গুলো নিয়ন্ত্রিত হতো। এতে অনেক ক্ষেত্রেই ছিল অস্পষ্টতা। বিভিন্ন সময়ে নানা জটিলতারও সৃষ্টি হতো।
বিধিমালা অনুযায়ী, মদ কেনাবেচা, পান, পরিবহনের ক্ষেত্রে নিতে হবে লাইসেন্স, পারমিট ও পাস কোথাও কমপক্ষে ১০০ জন মদের পারমিটধারী থাকলে ঐ এলাকায় অ্যালকোহল বিক্রির লাইসেন্স দেওয়া হবে।
বার বা মদের দোকান খোলার রাখার সময় নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। শুক্রবার, মহররম, শবে বরাত, ঈদে মিলাদুন্নবী, শবে কদরসহ মুসলমানদের ধর্মীয় গুরুত্বপূর্ণ দিনগুলোতে মদের দোকান বন্ধ রাখতে হবে। ২১ বছরের কম বয়সের ব্যক্তি মদপানের অনুমতি পাবেন না বলে বিধিমালায় উল্লেখ করা হয়েছে।
এছাড়া বিধিমালায় ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর জন্য চোলাইমদের মহালের সংখ্যা ও অবস্থান নির্ধারণ করে দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। মদপানের অনুমতি পাবেন চা বাগানের শ্রমিকরাও।
বিধিমালায় লাইসেন্স ও অনুমোদন ফি এবং এগুলোর নবায়ন ফি নতুন করে নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। সর্বনিম্ন ফি ১৫০ টাকা, আর সর্বোচ্চ ১০ লাখ টাকা। ডিস্টিলারি স্থাপনের ফি নির্ধারণ করা হয়েছে ১০ লাখ টাকা। দেশি মদপানের অনুমোদন ফি নির্ধারণ করা হয়েছে ১৫০ টাকা। বিলাতি মদপানের অনুমোদন ফি তিন হাজার টাকা।
এদিকে অ্যালকোহল (মদ বা মদজাতীয় পানীয়) পান এবং অ্যালকোহল ব্যবহার ও প্রয়োগের ক্ষেত্রে অনুমোদন নিতে হবে। তবে অ্যালকোহল বহন এবং অ্যালকোহল পরিবহনের ক্ষেত্রে পাস নিতে হবে।
লাইসেন্স ও অনুমোদনের মেয়াদ হবে ১ জুলাই থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত। লাইসেন্স, অনুমোদন ও পাস নেওয়ার প্রক্রিয়ার বিষয়ে বিধিমালায় বিস্তারিত উল্লেখ করা হয়েছে।
অ্যালকোহল পানের অনুমোদন পেতে চা শ্রমিকদের সংশ্লিষ্ট বাগানে কর্মরত থাকার প্রমাণ আবেদনের সঙ্গে যুক্ত করতে হবে। চা বাগান এলাকার জন্য নির্ধারিত দেশি মদের অনুমোদন কেবল চা শ্রমিক ছাড়া অন্য কোনো ব্যক্তির অনুকূলে দেওয়া যাবে না।
রেল, সড়ক, নৌ ও আকাশপথের যেকোনো একটি বা একাধিক পথে অ্যালকোহল বহন বা পরিবহন করা যাবে। তবে পাসের ওপর অবশ্যই বহন পথ লিপিবদ্ধ থাকতে হবে। পাসে উল্লিখিত পথ ছাড়া অন্য কোনো পথে আলকোহল বহন বা পরিবহন করা যাবে না।
বিধিমালায় আরো উল্লেখ করা হয়েছে, পোস্ট অফিস বা কোনো পরিবহন সংস্থার মাধ্যমে অ্যালকোহল পরিবহন করতে হলে পাসের একটি সত্যায়িত কপি অ্যালকোহলের আধার, পাত্র, বাক্স, পার্সেল বা মোড়কের গায়ে ভালোভাবে সেঁটে দিতে হবে, যেন কোনোভাবে বিচ্ছিন্ন না হয় এবং সহজে দৃষ্টিগোচর হয়।
চা বাগান বা পার্বত্য এলাকায় উৎপাদিত অ্যালকোহল কোনো অবস্থায়ই দেশের অন্য কোনো এলাকায় বিক্রয়, পান বা অন্য কোনো উদ্দেশ্যে বহন বা পরিবহন করা যাবে না বলেও উল্লেখ করা হয়েছে।
লাইসেন্সপ্রাপ্ত আমদানিকারক, উৎপাদনকারী, পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতা ছাড়া অন্য কোনো ব্যক্তি অ্যালকোহল ক্রয় বা বিক্রয় করতে পারবে না। কোনো আবাসিক এলাকা, ধর্মীয় ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাশে বা জনস্বাস্থ্য ও আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির জন্য ঝুঁকিপূর্ণ কোনো স্থানে অ্যালকোহল সংরক্ষণ বা গুদামজাতকরণের জন্য লাইসেন্স দেওয়া যাবে না বলে বিধিমালায় জানানো হয়েছে।
১০০ মদপানের পারমিটধারীর এলাকায় দেওয়া হবে বিক্রির লাইসেন্স। কোনো এলাকায় কমপক্ষে ১০০ জন দেশি মদ বা বিলাতি মদের পারমিটধারী (অনুমোদনপ্রাপ্ত) থাকলে সেখানে অ্যালকোহল বিক্রির লাইসেন্স দেওয়া হবে বলে বিধিমালায় উল্লেখ করা হয়েছে।
ক্লাব বা বার ছাড়া অন্যান্য লাইসেন্সের আওতায় মহাপরিচালকের অনুমোদিত যে কোনো ব্র্যান্ডের অ্যালকোহল সিল করা এবং অক্ষত অবস্থায় বিক্রি করতে হবে।
অ্যালকোহলের প্রতিটি বোতল, মোড়ক বা পাত্রের গায়ে ‘মদ্যপান স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর’ এবং ‘আইনের বিধান ব্যতীত মদ্যপান দণ্ডনীয় অপরাধ’ লালকালিতে সুস্পষ্টভাবে লেখা থাকতে হবে।
অনুমতি ছাড়া দোকান, বার বা অ্যালকোহল ব্যবহারের জন্য অনুমোদিত স্থানে বিনোদনমূলক সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করা যাবে না। একজন পারমিটধারীর কাছে এককালীন সর্বোচ্চ তিন ইউনিট মদ বিক্রি করা যাবে
বার-মদের দোকান খোলা রাখার সময়বিধিমালা অনুযায়ী, বার বেলা ১১টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত খোলা রাখা যাবে। তবে লেট ক্লোজিং লাইসেন্সের ক্ষেত্রে রাত ২টা পর্যন্ত খোলা রাখা যাবে।