শনিবার, ০৮ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ০৯:৩৪ অপরাহ্ন
সংবাদ নারায়ণগঞ্জঃ- নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে এক নারীকে বিবস্ত্র করে নির্যাতনের ভিডিও নিয়ে সরব সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক।দেশজুড়ে এ নিয়ে তীব্র আলোচনা-সমালোচনা চলছে। মানুষ ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছেন, দোষীদের দ্রুত বিচারের দাবি তাদের কণ্ঠে। সংবাদ মাধ্যমের মন্তব্যের ঘরে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন অনেকেই। জনমনে প্রশ্ন, এ ঘটনা এতদিন গোপন ছিল কীভাবে?
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, গত ২ সেপ্টেম্বর রাত ৯টার দিকে উপজেলার একলাশপুর ইউনিয়নের খালপাড় এলাকার এক গৃহবধূর বসতঘরে ঢুকে তার স্বামীকে পাশের কক্ষে বেঁধে রাখে স্থানীয় বাদল ও তার সহযোগীরা। এরপর গৃহবধূকে ধর্ষণের চেষ্টা করে তারা। এ সময় গৃহবধূ বাধা দিলে তাকে বিবস্ত্র করে বেধড়ক মারধর করে তারা মোবাইলে ভিডিওচিত্র ধারণ করে।পরবর্তীতে সেই ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে দেয়ার ভয় দেখিয়ে অনৈতিক প্রস্তাব ও টাকা দাবি করা হয় ওই নারীর কাছে। এতে রাজি না হওয়ায় সেই ভিডিও ফেসবুকে ছেড়ে দেয়া হয়।
ঘটনার ৩২ দিন পর রোববার (৪ অক্টোবর) বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে। এদিন সকাল থেকে ভিডিওটি ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হলে পুলিশ টের পায়। জানার পর তৎপর হয়ে দুই জনকে গ্রেফতার করে এবং ৩৭ বছর বয়সি নির্যাতিতাকে উদ্ধার করে নিরাপত্তা হেফাজতে নেয় পুলিশ।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বছর তিনেক আগে ভুক্তভোগী গৃহবধূর বিয়ে হয়। স্বামী তাকে রেখে দ্বিতীয় বিয়ে করে অন্যত্র বসবাস করতে থাকেন। দীর্ঘদিন ধরে স্বামীর সঙ্গে তার কোনো যোগাযোগ ছিল না। গত ২ সেপ্টেম্বর রাতে স্বামী তার সঙ্গে দেখা করতে আসেন। মাদক ব্যবসায়ী স্থানীয় দেলোয়ার বিষয়টি জানতে পেরে তার নেতৃত্বে এলাকার, রহিম, বাদল, কালাম ও তাদের সহযোগীরা স্বামীসহ ওই গৃহবধূকে অনৈতিক কাজ করেছে বলে অভিযোগে নির্যাতন চালায়। একপর্যায়ে ওই নারীকে বিবস্ত্র করে ভিডিও ধারণ করে তারা।
এ ঘটনার পর কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই পুরো এলাকার মানুষই জেনে যায়। তবে এক মাস আগে ওই নারী নির্যাতনের শিকার হলেও তিনি কিংবা তার পরিবারের কেউ থানায় কোনো অভিযোগ করেননি। ওই নারীর চাচা জানায়, ছেলে ও এক ভাইয়ের সঙ্গে বাবার বাড়িতে থাকতেন ভুক্তভোগী। ওই নারীর মা নেই। বাবাও দ্বিতীয় বিয়ে করে অন্যত্র থাকেন। বাড়িতে জায়গাজমি নিয়ে বিরোধের কারণে তাদের ভাইদের মধ্যে তেমন সখ্য নেই। নির্যাতনের ঘটনার পর থেকে বসতঘরে তালা ঝুলিয়ে তারা কোথায় চলে গেছেন, কাউকে বলে যাননি।
এ ঘটনা প্রকাশ্যের পর গণমাধ্যমে মুখ খোলেন ভুক্তভোগী গৃহবধূর বাবা। তিনি জানান, আমি নিরীহ লোক। সন্ত্রাসীদের ভয়ে কোনো কথা বলার সাহস পাই না। এ ঘটনার পর থানায় যাওয়ারও সাহস পাইনি। পুরো এলাকার মানুষ এ ঘটনা জানে। থানায় গেলে মেরে ফেলবে এ ভয়ও দেখায় ওই সন্ত্রাসীরা। আমি শুধু আল্লাহর কাছে বিচার চাই।
এলাকাবাসী জানায়, দেলোয়ার বাহিনীর প্রধান দেলোয়ারসহ অন্যান্য সদস্যরা কাউকে তোয়াক্কা করেন না। তারা অস্ত্র নিয়ে ঘুরে বেড়ায়। এলাকার প্রবাসীদের কাছে চাঁদা দাবি করেন। চাঁদা না দিয়ে নানা ধরনের হয়রানি করেন। এলাকার মেয়ে ও নারীদের কুপ্রস্তাব দেয়া তো তাদের কাছে দৈনন্দিন ঘটনা। তবে কেউ সাহসের অভাবে মুখ খুলেন না। এ কারণে এমন বর্বর কাণ্ড ঘটে যাওয়ার পরও এলাকায় কেউ তাদের বিরুদ্ধে কথা বলার সাহস করেনি।
ঘটনার ৩৩ দিন পর রোববার দিনগত রাত ১টার দিকে ভুক্তভোগী ওই গৃহবধূ বাদী হয়ে ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগে মামলা দায়ের করেন। ভুক্তভোগী ধর্ষণচেষ্টার মামলা করলেও স্থানীয়দের দাবি, ওই গৃহবধূকে গণধর্ষণ করে তাকে ও তার পরিবারের অন্য সদস্যদের গৃহবন্দি করে রাখা হয়েছিল। এক পর্যায়ে তারা সবাই বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে গিয়েছিলেন। তারা হয়তো ভয়ে গণধর্ষণের বিষয়টি গোপন করছেন।
এদিকে র্যাব জানায়, দেলোয়ার বাহিনীর প্রধান দেলোয়ার ওই এলাকার চিহ্নিত সন্ত্রাসী। এছাড়া দেলোয়ার বাহিনী বেগমগঞ্জে চাঁদাবাজি, মাদক ব্যবসা ও নানান রকম সন্ত্রাসী কার্যকলাপের সঙ্গে জড়িত। এমনকি দেলোয়ারের বিরুদ্ধে দুটি হত্যা মামলাও রয়েছে।
সোমবার দুপুর ২টায় র্যাব-১১’র অধিনায়ক লে. কর্নেল খন্দকার সাইফুল আলম প্রেস কনফারেন্সে সাংবাদিকদের জানান, ৫ অক্টোবর রাত আড়াইটায় নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ থানাধীন চিটাগাং রোড এলাকা থেকে বিশেষ অভিযান চালিয়ে মো. দেলোয়ার হোসেনকে (২৬) একটি পিস্তল, একটি ম্যাগাজিন ও দুই রাউন্ড গুলিসহ গ্রেফতার করা হয়। পরে দেলোয়ারের দেয়া তথ্যানুযায়ী ৫ অক্টোবর ভোর সাড়ে ৫টায় ঢাকার কামরাঙ্গীরচরের ফাঁড়ির গলি এলাকা থেকে ঘটনার প্রধান আসামি নূর হোসেন বাদলকে (২০) গ্রেফতার করা হয়।