মঙ্গলবার, ১০ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১:৪৬ পূর্বাহ্ন
সংবাদ নারায়ণগঞ্জঃ- নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী বলেছেন, ‘রাসেল পার্কে থাকবে অনেক বড় একটি খেলার মাঠ, বয়স্কদের জন্য বসার জায়গা, নারীদের জন্য সুইমিংপুল, শিশুদের জন্য সাইকেলিং, স্কেটিং জোন। আমার ক্ষমতাকালে এটা আমি আপনাদের উপহার দিতে চাই বলেই এত দ্রুত করা হচ্ছে। আপনারা সব সময় আমার পাশে ছিলেন, থাকবেন। আমিও চারুকলার সঙ্গে ছিলাম আছি, আগামীতেও থাকতে চাই। আমি চাই নারায়ণগঞ্জ চারুকলা সারাদেশে একটি অবস্থানে চলে আসুক।’
(৩১ জানুয়ারি) শুক্রবার বেলা সাড়ে ১১টায় শহরের শেখ রাসেক পার্ক সংলগ্ন নারায়ণগঞ্জ চারুকলা ইনস্টিটিউট প্রাঙ্গণে প্রতিষ্ঠানটির রজত জয়ন্তী উৎসবের উদ্বোধনী শেষে তিনি এ কথা বলেন।
তিনি আরও বলেন, নারায়ণগঞ্জ চারুকলা ইনস্টিটিউটের নির্মাণাধীন নতুন ভবনের নির্মাণকাল দুই বছর। কিন্তু আমরা চাচ্ছি যত দ্রুত এর কাজ শেষ করতে। আমি আমার ক্ষমতাকালের মধ্যেই এর কাজ শেষ করতে চাই। ২০২০ সাল পর্যন্ত আমি নাসিক মেয়র পদে থাকবো। তার আগে শুধু চারুকলা না রাসেল পার্কটিও সম্পূর্ণ করে নগরবাসীদের উপহার দিতে চাই।
নারায়ণগঞ্জ চারুকলা ইনস্টিটিউটের ম্যানিজিং কমিটির সভাপতি এড. আহসানুল করিম চৌধুরী বাবুলের সভাপতিত্বে এ সময় উপস্থিত ছিলেন বরেণ্য শিল্পী রফিকুন নবী, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রফিউর রাব্বি, নাসিক প্যানেল মেয়র আফসানা আফরোজ বিভা, নারায়ণগঞ্জ চারুকলা ইনস্টিউটের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ শিল্পী সমিরণ চৌধুরী, বর্তমান অধ্যক্ষ শিল্পী শামসুল আলম আজাদ, ম্যানেজিং কমিটির সদস্য আব্দুস সালাম খোকন, জাহিরুল ইসলাম প্রমুখ।
বরেণ্য চিত্রশিল্পী রফিকুন নবী বলেন, প্রতিষ্ঠাকাল থেকেই আমি নারায়ণগঞ্জ চারুকলার সাথে সম্পৃক্ত আছি। পঁচিশ বছর আগে একটা বস্তির মাঝখানে দূর্গন্ধময় স্থানে শুরু হয়ে আজকে সারাদেশের মধ্যে সাড়া জাগিয়েছে নারায়ণগঞ্জ চারুকলা ইনস্টিটিউট। নারায়ণগঞ্জের মানুষ সংস্কৃতিমনা বলেই এটা সম্ভব হয়েছে। এই প্রতিষ্ঠানটি নারায়ণগঞ্জের গর্ব।
নারায়ণগঞ্জ চারুকলার রজত জয়ন্তী উৎসবের উদ্বোধন শেষে শোভাযাত্রা বের হয়। পরে আলোচনা সভা, প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের ক্রেস্ট প্রদান করা হয়। এ সময় স্মৃতিরচারণ করেন প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা। বিকেলে চলে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এতে অংশ নেন মিঠামন গানের দলের সদস্য ইসরাত জাহান কাকন, দিদার ও রনজিত, জলের গান ব্যাংন্ড দলের কনক আদিত্য, মিউজিক কম্পোজার ডিকেএম শান্ত, সমগীতের সমন্বয়কারী শিল্পী অমল আকাশ, শহুরে গায়েনের ভোকাল শাহিন মাহমুদসহ প্রতিষ্ঠানের প্রাক্তণ, বর্তমান শিক্ষার্থীরা।
পরিবেশের উপর বিশেষ নজর রেখে রজত জয়ন্তীর সম্পূর্ণ আয়োজন করা হয়েছে। আয়োজনের পুরো অংশেই বর্জন করা হয়েছে পরিবেশ দূষণের জন্য মারাত্মকভাবে দায়ী প্লাস্টিক। আয়োজকরা জানান, নারায়ণগঞ্জ চারুকলা ইনস্টিটিউট পরিবেশ রক্ষার্থে খুব সচেতনভাবে এ উৎসবে কোনো প্লাস্টিক উপাদান ব্যবহার করেনি। এ উৎসবে ব্যবহৃত সকল কিছু পরিবেশবান্ধব উপাদানে তৈরি। প্রাক্তন ও বর্তমান শিক্ষার্থীরাই এসব নিজ হাতে তৈরি করেছে বলে জানান চারুকলার অধ্যক্ষ শিল্পী শামসুল আলম আজাদ।
তিনি বলেন, ‘নারায়ণগঞ্জের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য ঘিরেই নারায়ণগঞ্জ চারুকলা ইনস্টিটিউট। আমরা সবাই জানি নারায়ণগঞ্জ পাট, জামদানী কাপড় বিশ্বব্যাপী প্রসিদ্ধ। আপনারা দেখতে পাবেন, আমাদের উৎসবের ব্যানার পাটের তৈরি এবং রজত জয়ন্তীর লোগো জামদানী ডিজাইন থেকে অনুপ্রাণিত। এছাড়া যেসব উপকরণ তৈরি করা হয়েছে তার সবগুলোতেই প্লাস্টিক বর্জন করা হয়েছে।’
জানা যায়, শিল্পী সমীরন চৌধুরী ১৯৯৪ সালে মাত্র চারজন শিক্ষার্থী নিয়ে এই প্রতিষ্ঠানের যাত্রা শুরু করেন। প্রথমে শহরের চাষাঢ়ায় অবস্থিত সমীরন চৌধুরীর স্টুডিওতে এর কার্যক্রম শুরু হয়। পরে নগরীর জিমখানা এলাকা একটি ঘর তৈরি করা হয়। ১৯৯৯ সালে প্রতিষ্ঠানটি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত হয়। পরবর্তীতে ২০০৪ সালে এমপিওভুক্ত হয় প্রতিষ্ঠানটি। এ বছর প্রথম ব্যাচে ডিগ্রী পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে প্রতিষ্ঠানের ১৪ জন শিক্ষার্থী। বর্তমানে নারায়ণগঞ্জ চারুকলা ইনস্টিটিউটে দুই বিভাগে পাঠদান করা হয়।