সংবাদ নারায়ণগঞ্জ:- ফতুল্লার কুতুবপুরের আওয়ামীলীগ নেতা ইসহাকের সংবাদ প্রকাশের পর বেরিয়ে আসতে শুরু করেছে তার অপরাধ জগতের নানা অজানা কাহিনী।পুলিশ হত্যা কান্ডের মধ্য দিয়ে হাত রাঙ্গানো ইসহাক নন্দলালপুর বাসীর নিকট পরিনত হয়েছে মূর্তিমান আতংক হিসেবে।
তথ্য মতে, কুতুবপুরের নন্দলালপুর,নয়ামাটি,নাককাটা বাড়ি, রেললাইন,মেডিকেল গলি,প্রাপ্তি সিটি সহ আশপাশের কিশোর গ্যাংয়ের গডফাদার হিসেবে আলোচনায় উঠে এসেছে ফতু্ল্লা থানা আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এইচ এম ইসহাকের নাম। ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে জড়িত হওয়ার সুবাদে থানা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদ বাগিয়েছেন তিনি। নিজেকে একটি বেসরকারি ব্যাংকের কর্মকর্তা হিসেবেও পরিচিয় দিয়ে থাকেন তিনি।
অপরাধের সাথে জড়িত থাকার বিষয়টি তার জন্য নতুন কিছু নয়। ছাত্র রাজননীতি করার সময় ৮০’র দশকের শেষের দিকে পাগলা স্কুলের সামনের রাস্তায় পুলিশ হত্যার মধ্য দিয়ে হাতে খড়ি হয় ইসহাকের। আর এ হত্যা কান্ডের মধ্য দিয়েই উপরে উঠার সিড়ি পেয়ে যায় ইসহাক। সরকার দলীয় ক্ষমতাকে কাজে লাগিয়ে বনে যায় ব্যাংকার। তবে ব্যাংকার হলেও অর্থ উপার্জনের নেশা থেকে বের হতে পারেন নি তিনি।আর তাই তিনি নিজ এলাকা জুড়ে গড়ে তুলেছেন মাদকের বলেন বিশাল বাজার। দলীয় নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র মতে,মাদক কেনাবেচার সাথে ইসহাক ও তার ভাইদের জড়িত থাকাট বিষয়টি সংসদ সদস্য একে,এম শামীম ওসমান পর্যন্ত অবগত রয়েছেন।
এ নিয়ে ইসহাক কে কড়া ভাষায় কটুক্তির পাশাপাশি শাসিয়েছেন সংসদ সদস্য। তথ্য মতে, ইসহাক অত্র অঞ্চলে একজন ঠাণ্ডা মাথার ভয়ঙ্কর অপরাধী হিসেবে কাজ করে যাচ্ছেন। কুতুবপুরে সংগঠিত একাধিক হত্যাকাণ্ডে নেপথ্যে থেকে কলকাঠি নাড়ার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।মহাধূর্ত ইসহাক এলাকায় নিজের প্রভাব বজায় রাখতে বেশ কয়েকটি কিশোর গ্যাংকে সরাসরি শেল্টার দেন। বিদ্যমান কিশোর গ্যাংগুলো নিজেদের প্রভাব রাখতে নিয়মিত সংঘর্ষে জড়াচ্ছে। তবে ঠাণ্ডা মাথার ভয়ঙ্কর ক্রিমিনাল ইসহাক নিজের স্বার্থে সমর্থন দিচ্ছেন সব পক্ষকেই।
কিশোর গ্যাংয়ের এসব সদস্যদের দ্বারাই অবাধে মাদক ব্যবসা, ছিনতাই, চাঁদাবাজি, ডাকাতির মতো অপকর্ম করাচ্ছেন ইসহাক। শুধু তাই নয়, মিছিল; সমাবেশে এসকল বখে যাওয়া কিশোরদের নিয়েই হাজির হচ্ছেন ইসহাক। জানা যায়, সম্প্রতি একাধিক সংঘর্ষের ঘটনায় আলোচনায় আসা স্বাধীন ও সাদ্দাম উভয় কিশোর গ্যাংয়ের গডফাদার ইসহাক। নিজের ক্ষমতাকে পাকাপোক্ত করতেই স্বাধীন ও সাদ্দামকে ব্যবহার করছেন তিনি। আর ক্ষমতাসীন দলের পদধারী নেতার শেল্টারে হত্যা, জখম, ডাকাতি, মাদক ব্যবসা, ছিনতাই করতে পিছপা হচ্ছে না বখে যাওয়া কিশোরেরা। সভা-সমাবেশ, মিছিল কিংবা বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ইসহাকের ডানে বামেই এদেরকে দেখা যায়। সাদ্দাম-স্বাধীনের দাবির সত্যতা মেলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও। মিছিলে ইসহাক নিজের হাতে ধরে স্বাধীনকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন, এমন ছবি ছড়িয়েছে ফেসবুকে।
এছাড়া ইসহাকের সাথে স্বাধীনের বেশকিছু ছবি-ভিডিও প্রমাণ করে, ইসহাকের লোক হয়েই স্বাধীন তার অপকর্ম চালাচ্ছে। ইসহাকের আস্কারা পেয়েই স্বাধীন ও তার বাহিনী নিয়মিতভাবে হাতে ছেন, চাপাতি, রামদাসহ নানা অস্ত্র নিয়ে প্রায়ই ঝাঁপিয়ে পড়ছে অনেকের উপরে। স্বাধীনের বিরুদ্ধে ধর্ষণসহ একাধিক মামলাও রয়েছে। ইতোমধ্যে ধর্ষণ মামলায় জেলও খেটেছে সে। সাদ্দামের গডফাদার হিসেবেও যথারীতি এসেছে ইসহাকের নাম। সাদ্দামের বাবা সালাউদ্দিনও একজন চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী ও মাদকসেবী। পিতার দেখানো পথেই কুখ্যাত মাদক ব্যবসায়ী ও মাদকাসক্ত হিসেবে পরিচয় পেয়েছেন সাদ্দাম। ইসহাকের শেল্টারে নন্দলাল্পুর, নয়ামাটি, রেললাইনে রামরাজত্ব কায়েম করেছে সাদ্দাম।
তার বাহিনীর সদস্যদের হাতেও রয়েছে ছেন, রামদা, চাপাতিসহ বিভিন্ন ধারালো অস্ত্র। শুধু তাই নয়, ইসহাকের পরিবারেরও একাধিক সদস্য সন্ত্রাস, মাদক ব্যবসা ও সেবনে সরাসরি জড়িত বলে অনুসন্ধানে উঠে এসেছে। ইসহাকের আপন ছোট ভাই ইলিয়াস কুতুবপুরের মাদকের বিরাট বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে দীর্ঘদিন ধরেই । ইসহাকের শেল্টারেই ইলিয়াস ইয়াবা, ফেনসিডিল, গাঁজা বিক্রি করছে দেদারসে। ইলিয়াস নিজেও মাদকাসক্ত বলে জানা যায়। সূত্রমতে, ইসহাকের ভাতিজা পাভেলও আরেক কুখ্যাত মাদক ব্যবসায়ী ও মাদকসেবী। চাচার প্রভাবে পাভেল বিশাল এলাকাজুড়ে মাদক বিক্রি করছে। তার রয়েছে নিজস্ব বাহিনীও। নিরীহ লোকজনকে ফিটিং দেওয়া, চাঁদাবাজি, চুরি, ছিনতাই, ডাকাতি এই বাহিনীর নিয়মিত কাজ।
একজন কাঠমিস্ত্রীর সন্তান হয়েও ইসহাকের সম্পত্তির পরিমাণ অবাক করার মতোই। নন্দলালপুরে সুরম্য অট্টালিকা, নামে বেনামে বিপুল পরিমাণ জমি, ব্যক্তিগত গাড়িও জুটিয়েছেন তিনি। আর এ সবই সম্ভব হয়েছে মাদক ব্যবসা সহ নানা খাতের অবৈধ অর্থে। জানা যায়, নন্দলালপুর রেললাইনে সাদ্দামের হেরোইন স্পট থেকে দৈনিক সাত হাজার টাকা করে দীর্ঘ বছর পেয়েছেন ইসহাক। এছাড়া মাদক সহ অন্যান্য অবৈধ টাকার ভাগ নিয়মিতই পাচ্ছেন তিনি। এলাকাবাসীর মতে, ব্যাংকে চাকুরি করাকে সাইনবোর্ড হিসেবে ব্যবহার করে ইসহাক কুতুবপুরে একের পর এক সন্ত্রাসী, মাদক ব্যবসায়ীর জন্ম দিয়েছেন। তার স্বার্থে তিনি অনেক যুবককে সর্বনাশা পথে টেনে এনেছেন, ব্যবহারের পরে আবার দূরে ঠেলে দিয়েছেন। তাঁদের মতে, কিশোর গ্যাং, মাদক, সন্ত্রাস নির্মূল করতে হলে সবার আগে ইসহাকের মতো লেবাসধারী নেতাকে আইনের আওতায় নিয়ে আসতে হবে।