বৃহস্পতিবার, ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ০২:৫৫ অপরাহ্ন
সংবাদ নারায়ণগঞ্জ:- স্বামী ভরণপোষণ না দেওয়ায় গর্ভধারিনী মা হত্যা করেছে নবজাতককে। প্রায় দেড় বছর আগে ঘটনাটি ঘটেছে নারায়ণগঞ্জ জেলার বন্দর থানার ১ নম্বর মাধবপাশা এলাকায়। একটি চিরকুটের সূত্র ধরে দীর্ঘদিন মামলাটির তদন্ত করে তদন্তকারী কর্মকর্তা পিবিআই নারায়ণগঞ্জ জেলার পরিদর্শক মো. সাইফুল ইসলাম হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন করেন।
(৫ সেপ্টেম্বর) রোববার নারায়ণগঞ্জ সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট নুরুন্নাহার ইয়াসমিনের আদালতে নিজ দোষ স্বীকার করে ১৬৪ ধারা মোতাবেক স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করেন নিহত নবজাতকের মা ।
স্বীকারোক্তিতে নবজাতকের মা খাদিজা আক্তার পিংকি আদালতকে জানিয়েছেন, স্বামী ভরণপোষণ না দেওয়ায় এবং পরিবারের লোকজনের উপহাস সহ্য করতে না পেরে দুই মাস বয়সী তার ঘুমন্ত ছেলে ইমাম হোসেনকে কোলে নিয়ে ঘরের পাশের পুকুরে ফেলে হত্যা করেন।
মামলাটির তদন্তকারী সংস্থা পিবিআই এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, গত ২০২০ সালের ১৯ এপ্রিল রাত ১২টার দিকে নারায়ণগঞ্জ জেলার বন্দর থানার ১ নম্বর মাধবপাশা এলাকায় নিহত নবজাতকের বাবা মো. রুবেলের শ্বশুর জবেদ আলীর বসত বাড়ি থেকে নবজাতক ইমাম হোসেন হারিয়ে যায়। এসময় খাদিজা আক্তার পিংকি চিৎকার দিলে বাড়ির লোকজন ছুটে আসে। তখন পিংকি জানান, তিনি এবং তার ছেলে ইমাম হোসেন ঘুমিয়ে থাকা অবস্থায় কে বা কাহারা তার ছেলেকে চুরি করে নিয়ে যায়। পরদিন ২১ এপ্রিল সকাল ৭ টার দিকে পিংকির বসত বাড়ির পাশে পুকুর থেকে তার ছেলেকে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়।
এ ঘটনায় নিহতের বাবা মো. রুবেল এজাহার প্রদান করলে বন্দর থানায় মামলা দায়ের করা হয়।
মামলা দায়েরের পর বন্দর থানা পুলিশ মামলা তদন্তে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি না হওয়ায় এক পর্যায়ে নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশের আবেদনের প্রেক্ষিতে পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স এর নির্দেশে পিবিআই নারায়ণগঞ্জ জেলা মামলাটির তদন্তভার গ্রহণ করে।
তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক মো. সাইফুল আলম মামলাটির তদন্তভার গ্রহণ করেন। গত ২০২০ সালের ৩০ জুলাই থেকে মামলাটির ব্যাপক তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনা করেন। নিবিড় তদন্তকালে ঘটনাস্থল থেকে সাত শব্দের একটি ছোট কাগজের টুকরা আলামত হিসেবে জব্দ করেন। জব্দকৃত কাগজে লেখা থাকে ‘বাচা গড়ে গড়ে চুরি করমু সাবথাব’
এক পর্যায়ে পিংকির হাতের লেখার সঙ্গে জব্দ লেখার সঙ্গে মিল পায়। রোববার খাদিজা আক্তার পিংকিকে পিবিআই নারায়ণগঞ্জ অফিসে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদে তিনি জানান, তার স্বামী তাকে বার বার টাকার জন্য চাপ দিতো। তার স্বামী চাইতো তার স্ত্রী খাদিজা আক্তার পিংকি তাকে কামাই করে খাওয়াবে। তিনি বাবার বাড়িতে আসার পর তার স্বামী তার কোনো ভরণ পোষণ দিতো না। এটা নিয়ে তার পরিবারের লোকজন তাকে উপহাস করতো। তাই সে চাপ সহ্য করতে না পেরে ১৯ এপ্রিল রাত সাড়ে ১২ টার দিকে তার ঘুমন্ত ছেলে ইমাম হোসেনকে কোলে নিয়ে ঘরের পাশের পুকুরে ফেলে দেয়।
রোববার সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট নুরুন্নাহার ইয়াসমিনের আদালতে নিজ দোষ স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করেন।