শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০১:২৯ পূর্বাহ্ন

বন্দরে বুলবুল নিহত- আড়াই লাখ টাকায় রফাদফা, মাকসুদ চেয়ারম্যানকে নিয়ে সর্বত্র সমালোচনা

সংবাদ নারায়ণগঞ্জঃ- বন্দর উপজেলার ৫ টি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানেরর মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত ও সমালোচিত মাকসুদ হোসেন চেয়ারম্যান। মুছাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাকসুদ হোসেন শুধু নয় তার পরিবারই নানা উপাধিতে ভূষিত।

তার পিতা মৃত রফিকুল ইসলাম রফিক সরকারের তালিকাভুক্ত রাজাকার। রাজাকারের ছেলে মাকসুদ হোসেন গত ২৬ জানুয়ারি বুলবুল নামের এক যুবক নিহত হওয়ার ঘটনাটি বিচার করে আড়াই লাখ টাকা ২ টি ইটভাটাকে জরিমানা ধার্য করে প্রমান করে দেন বুলবুলকে হত্যা করা হয়েছে। একজন ইউপি চেয়ারম্যান গ্রাম্য আদালতে বিচার করার যে বিধিমালা আছে তাকে তোয়াক্কা করার প্রয়োজনই মনে করেননি।

স্থানীয় সরকারের বিধিমালা তোয়াক্কা না করে হত্যা কান্ডের ঘটনা ধামাচাপা নিয়ে সর্বত্র সমালোচনার ঝড় বইলেও প্রশাসন রহস্যজনক কারনে নীরব ভূমিকা পালন করছে। এ ঘটনাটি জাতীয় ও স্থানীয় দৈনিক পত্রিকাসহ অনলাইন পোর্টালে নিউজ হলেও প্রশাসনের সকল দপ্তর নীরব ভূমিকা দেখে জনমনে দেখা দিয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। তাদের ভাষ্য রাজাকার ও চিহ্নিত সন্ত্রাসী পরিবারের সদস্য মাকসুদ হোসেন চেয়ারম্যান।

তিনি ঠান্ডা মাথার একজন দূর্ধষ চেয়ারম্যান মাকসুদ হোসেন। তার রয়েছে একাধিক বাহিনী। এক সময় মাকসুদ হোসেন চেয়ারম্যান বিএনপির রাজনীতির সাথে জড়িত থাকলেও পরে নিজের অবস্থানে অটল থাকতে জাতীয় পার্টির রাজনীতিতে আসেন। ধরাকে সরা করা যার কাজ। সেই ব্যাক্তিটি মুছাপুর ইউপি চেয়ারম্যান মাকসুদ হোসেন।

ফসলী জমি থেকে মাটি কেটে নেওয়ার প্রতিবাদ করায় ইটভাটার মালিকদের প্রহারে আহত যুবকের মৃত্যু হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে ঘটনা ধামাচাপা দিতে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সেই রাজাকার পুত্র মাকসুদ হোসেনের মাধ্যমে আড়াই লাখ টাকায় রফাদফা করা হয়েছে। দীর্ঘ সময় দেনদরবার শেষে মাকসুদ চেয়ারম্যানের সিদ্ধান্তে দীর্ঘ সময় পরে দাফন করা হয় নিহতের লাশ।

নারায়ণগঞ্জ বন্দর উপজেলার দক্ষিণ কুলচরিত্র এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।পদুগড় গ্রামের মোজাম্মেল হক সর্দারের ছেলে মোঃ বুলবুল আহমেদ (৩৩) ঘটনার ১০ দিন পর শনিবার সকালে নিজ বাড়িতে মারা যান। বুলবুলের মৃত্যুর খবর পেয়ে ইটভাটার মালিক পক্ষ স্থানীয় ইউপি য়েরম্যানের মাধ্যমে দুই লাখ পঞ্চাশ হাজার টাকায় রফাদফার পর লাশ দাফন করা হয়েছে বলে গ্রামবাসী জানিয়েছেন।

ফসলি জমি থেকে মাটি কেটে নিতে বাঁধা দেয়ায় ১৬ জানুয়ারি দুপুরে বুলবুলকে বাড়ি থেকে ডেকে এনে ভেকুর ব্যাটারী চুরির আখ্যা দিয়ে বেদম মারপিট করে ইটভাটার মালিক ও তার সাঙ্গপাঙ্গরা। অমানুষিক নির্যাতনে গুরুতর আহত বুলবুলকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

নিহতের মা মাজেদা বেগম জানান, বন্দর থানার দারোগা আনোয়ার হোসেনসহ ৪ জন পুলিশের সামনে হান্ডক্যাপ পড়া অবস্থায় এলোপাতারি মারধর করলেও কিছু বলেননি। ইটভাটার মালিকদের হয়ে ৩ লাখ টাকা নিয়ে আমার ছেলেকে থানায় নিয়ে যায় এবং ১৫১ ধারায় আদালতে প্রেরন করেন। জমি সংক্রন্ত বা কোন ধরের উত্তেজনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে উভয় পক্ষের লোকজন নিয়ে যায়।

শুধু বুলবুলকে নিয়ে যাওয়াই আর্থিক লেনদেনের বিষয়টি প্রমান করে বলে একজন আইনজীবী জানান। এ বিষয়ে জেলা পুলিশ সুপারের মোবাইল নাম্বারে ফোন দিলেও রিসিভ করেননি।

উল্লেখ্য যে, ফসলি জমির মাটি কেটে নেওয়ার প্রতিবাদ করায় ইঁট ভাটার মালিকদের সাথে বুলবুলের ঝগড়া হয়। সে ঘটনার জের ধরে ১৬ জানুয়ারি দুপুরে ফুনকুল গ্রামে অবস্থিত ব্রিক ফিল্ড (পিবিএম) ইটভাটার মালিক রাসেদ, তার ভাই আনিছ, নাইন জিরো টু ব্রিক ফিল্ড (৯০২) ইটভাটার মালিক আলমচাঁন ও মোমেন, আল আমিন ও পদুঘর গ্রামের মাহবুবসহ ১৫/২০ জন লাঠিসোটা নিয়ে বুলবুলকে বাড়ি থেকে ধরে এনে চুরির আখ্যা দিয়ে রাস্তায় ফেলে প্রকাশ্যে এলোপাতারি মারধর করে।একপর্যায়ে মুছাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কুখ্যাত রাজাকার পুত্র মাকসুদ হোসেনের পরামর্শে পুলিশের হাতে তুলে দেয় বুলবুলকে। থানা পুলিশ আদালতে সোপর্দ করলে আদালত শাররীক অবস্থা বিবেচনা করে বুলবুলকে জামিন দেয়। বাড়িতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শনিবার সকালে মারা যায়।

গ্রামবাসী জানান, ইটভাটার মালিকদের মারধরের কারণেই বুলবুল মারা গেছে। মৃত্যর পরে লাশ দাফন না করে মুছাপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মাকসুদ হোসেনের সিদ্ধান্তের অপেক্ষা করা হয়। পরে চেয়ারম্যান মাকসুদ হোসেন মধ্যস্থতা করে দেন। পিবিএম এবং ৯০২ দুই ইটভাটার মালিকরা নিহতের পরিবারকে জরিমানা বাবদ ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা পরিশোধ করবে।দীর্ঘ সময় অপেক্ষার করে বিকালে বুলবুলের লাশ দাফন করা হয়।

ঘটনা জানতে মুছাপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মাকসুদ হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হয়। তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

বন্দর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) রফিকুল ইসলাম মৃত্যর ঘটনা জানা নেই উল্লেখ করে বলেন, ১০-১২ দিন পূর্বে চাঁদাবাজি ও চুরির অভিযোগে বুলবুল নামের একজনকে মারধর করেছে ইটভাটার মালিক ও এলাকাবাসী ।

এ ঘটনার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছিল। পরে অভিযুক্ত চোর বুলবুলকে পুলিশের কাছে সোপর্দ করে এলাকাবাসী। তাকে আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে। এঘটনায় অভিযোগ পেলে অবশ্যই জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। ব্যবস্থা গ্রহনের আশ্বাস দিয়ে এমন একটি লোমহর্ষক ঘটনাকে ধামাচামা দিয়ে কাকে রক্ষা করছে প্রসাশন। মাকসুদ চেয়ারম্যান হত্যাকান্ডের ঘটনাকে বিচার করে ম্যাজিস্ট্রেটের ভূমিকা পালন করেছে। মাকসুদ হোসেন চেয়ারম্যানকে ম্যাজিস্ট্রেট মাকসুদ হোসেন বললেও কোন ভুল হবে না। এলাকাবাসীর ভাষ্য মানবাধিকার কমিশন, নাগরিক কমিটির নেতাদের দৃষ্টিতে এমন লোমহর্ষক ঘটনাটি আসেনি। না কি তারাও মাকসুদ হোসেন চেয়ারম্যানের কাছে বিক্রি হয়ে গেছে।

নিউজটি শেয়ার করুন...


© 2022 Sangbadnarayanganj.com - All rights reserved
Design & Developed by POPULAR HOST BD