বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ০৫:৩৮ অপরাহ্ন

কাশীপুরে ছাত্রলীগ নেতা পরিচয়ে আমিন বেপরোয়া

কাশীপুরে ছাত্রলীগ নেতা পরিচয়ে আল আমিনের নানা অপকর্ম, ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি এলাকাবাসীর

সংবাদ নারায়ণগঞ্জ:- নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার কাশীপুর ইউনিয়নবাসীর জন্য এক আতঙ্কের নাম আল আমিন। নিজেকে ছাত্রলীগ নেতা দাবি করে বিস্তর অপকর্ম করার অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে। স্থানীয় প্রভাবশালী মহলের নাম ভাঙিয়ে বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত থাকায় আল আমিনের প্রতি ফুঁসে উঠেছে এলাকাবাসী। তার অত্যাচারে দিশাহারা জনসাধারণ মুক্তির উপায় খুঁজছেন দীর্ঘদিন ধরে।

একাধিক সূত্রমতে, দলীয় কোনো পদপদবীতে না থাকলেও নিজেকে কাশিপুর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি হিসেবে জাহির করেন আল আমিন। অনুসন্ধানে জানা যায়, বিগত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে জনৈক মামুনকে কাশীপুর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি ঘোষণা করা হয়। পরবর্তীতে মামুন বিদেশে পাড়ি জমালে নতুন করে আর কাউকে সভাপতির দায়িত্ব দেওয়া হয়নি। ফলে নিয়মানুযায়ী তিনিই সভাপতি পদে বহাল আছেন। কিন্তু কোনো ধরণের নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে সম্প্রতি আল আমিন নিজেকে ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি হিসেবে দাবি করতে থাকেন। অভিযোগ রয়েছে, এক প্রভাবশালী নেতার মৌখিক ঘোষণাতেই এমন দুঃসাহস দেখাচ্ছেন আল আমিন। বিবাহিত হয়েও আল আমিনের এমন ন্যাক্কারজনক কর্মকাণ্ডে বিব্রত স্থানীয় নেতাকর্মীরাও, কিন্তু প্রভাবশালী নেতার ভয়ে তারা প্রকাশ্যে মুখ খুলতে শঙ্কাবোধ করছেন।

নিজেকে যুবলীগ নেতা হিসেবেও পরিচয় দিয়ে থাকেন আল আমিন। স্থানীয় যুবলীগের নেতাকর্মীরা জানান, যুবলীগে আল আমিনের কোনো সদস্য পদও নেই। সূত্রমতে, আল আমিন ভুয়া পদ ব্যবহার করে এলাকায় প্রভাব বিস্তার করেন। এমনকি প্রভাবশালী নেতাদের নাম ব্যবহার করে নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড সংগঠিত করেন।

মাদকাসক্ত আল আমিন ২০১৮ সালে নিজ কার্যালয়ের ভেতরে মাদক সেবনকালে পুলিশের হাতে আটক হন। ওই সময়ে প্রভাবশালী মহলের দেনদরবারে সে যাত্রায় রেহাই মেলে তার।

নিজেকে বড় নেতা দাবি করা আল আমিন গড়ে তুলেছেন বিশাল এক ক্যাডার বাহিনী। প্রতারণার কাজেও বেশ সিদ্ধহস্ত আল আমিন। জালিয়াতি-প্রতারণা, অর্থ আত্মসাৎ এর অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। কেউ এসবের প্রতিবাদ করলেই তার ওপর নেমে আসে অত্যাচারের ষ্টীমরোলার।

বড় প্রভাবশালী নেতাদের দ্বারা হয়রানি করার ভয় দেখানো হয় ভুক্তভোগীদের। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ভুক্তভোগী বলেন, ‘ব্যবসার কথা বলে আল আমিন আমার কয়েক লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছে। দীর্ঘদিন ধরে সে আমার টাকা ফেরত দিচ্ছে না। টাকা চাইতে গেলে বিভিন্নভাবে হুমকি দেয়। এমনকি বেশি বাড়াবাড়ি করলে আমাকে মেরে ফেলা হবে বলেও জানিয়ে দিয়েছে। আমার ব্যবসায়ের টাকা উদ্ধার ও জীবনের নিরাপত্তার জন্য আমি প্রশাসনের হস্থক্ষেপ কামনা করছি।

আরেক ভুক্তভোগী ইবনে সউদ বলেন, ‘আমার একটি বিক্রয়যোগ্য জায়গা জনৈক রিপন,আব্বাস, ইউসুফ, শাহীন, মাসুম সহ ছয়জনের কাছে বিক্রির উদ্দেশ্যে বায়না করি। পরে তারা টাকা দিচ্ছিলেন না। এক লোক আমাকে কাশীপুর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি পরিচয় দেওয়া আল আমিনের কাছে নিয়ে যান। আল আমিন আমার কথা শুনে টাকা উদ্ধারের আশ্বাস দেন।

কিন্তু পরবর্তীতে আমাকে না জানিয়ে তিনি ওই ছয়জনের কাছ থেকে টাকা উদ্ধার করে আমাকে না দিয়ে আত্মসাৎ করেন। প্রথমে টাকার কথা অস্বীকার করলেও পরে প্রমাণিত হওয়ায় স্বীকার করেন আল আমিন। কিন্তু দেড় বছর যাবৎ সেই টাকা আমাকে দিচ্ছেন না তিনি। বিষয়টি স্থানীয় জনপ্রতিনিধিকে জানালে তিনি আল আমিনকে দেখা করতে বলেন। কিন্তু একাধিকবার বলার পরেও আল আমিন দেখা করেননি। মূলত দলের প্রভাব খাটিয়েই আল আমিন এমন অসংখ্য অপকর্ম করে বেড়াচ্ছে। কিন্তু রহস্যজনকভাবে দলের শীর্ষস্থানীয় নেতৃবৃন্দ নীরব ভূমিকা পালন করছেন। এতে দলের ভাবমূর্তি চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে।’

নেতাকর্মীরা বলছেন, আল আমিনের অপকর্মের কারণে আমাদের বিভিন্ন প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হচ্ছে। একজন মাদকাসক্ত, প্রতারক, অর্থলোভী ব্যক্তি দলের সাইনবোর্ড ব্যবহার করে নেতিবাচক কর্মকাণ্ড করে যাচ্ছেন, যা লজ্জাজনক। ছাত্রলীগ-যুবলীগের কোনো পদে না থেকেও আল আমিন সংগঠনের ইমেজকে ক্ষতিগ্রস্থ করছেন। এতে করে জনসাধারণ আওয়ামী লীগ সম্পর্কে ভুল বার্তা পেতে পারে। আল আমিনের মতো দলের বোঝাদের অবিলম্বে অপসারণ করা না হলে তার জন্য দলকে চড়া মাশুল দিতে হতে পারে।

এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে আল আমিনকে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি ফোনটি রিসিভ করেননি।

নিউজটি শেয়ার করুন...


© 2022 Sangbadnarayanganj.com - All rights reserved
Design & Developed by POPULAR HOST BD